- বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয় এসব ধারণা বেশি অনেক প্রচলিত । চিনি বেশি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়?
ধর্মডায়াবেটিস কি বেশি বেশি চিনি খেলে হয়?
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার বা চিনি যাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না সেটা প্রথমেই বলা হয়ে থাকে।
আর এ জন্যই বেশ প্রচলিত যে চিনিযুক্ত খাবার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য এই রোগ হয়ে থাকে কিন্তু মানুষের এই ধারণা কত টুকু সত্যি মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে যে ডায়াবেটিস হয়।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যে রক্তে চিনির পরিমাণ বা গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই রোগ একবার হলে তা সারাজীবন নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়।
আমরা সাধারণত খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে শর্করার ভেঙ্গে চিনি বা গ্লুকোজে রূপান্তর করে এবং তা আমাদের শরীরে শক্তিতে পরিণত হয়।
ডায়াবেটিস হওয়ার ফলে আমাদের শরীরে কোষগুলো আগে যে চিনি বা গ্লুকোজকে শরীরের জালানি বা শক্তিতে পরিণত করতো । তা তখন কোষের পরিবর্তে আমাদের রক্তে চলে যায় ।তখনই ডায়াবেটিস হয়।
ইন্টারনেশেনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন তাদের এক ব্যখায় বলেছেন যে ডায়াবেটিস এমন এক দীর্ঘস্থায়ী রোগ যে এটার কারণে মানুষের শরীরে সঠিক ভাবে ইনসুলিন নামক হরমোন তৈরি করতে পারে না ।
ডায়াবেটিস হলে মানুষের শরীরে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা বেড়ে যায় আর যদি সেটার প্রয়োজনীয় প্রতিকার না করা হয় তাহলে সেটা বাড়তেই থাকে। এবং শরীরে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
ডায়াবেটিস হলে শুধু গ্লুকোজ না আরো নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। তবে এই রোগ রক্তে হয় বলে তা রক্তে পরীক্ষা করা হয় বলে আলোচনা করা হয় জানান চিকিৎসকরা।
এক কোটির ও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাংলাদেশে
বর্তমান বিশ্বে ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত এবং ৬৭ লাখ মানুষ মৃত্যু বরণ করেন প্রতি বছর । ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন মতে।
আক্রান্ত মানুষের মধ্যে চতুর্থ ভাগ মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশের নাগরিক।
২০২৩ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে জাতীয় ডায়াবেটিস চিকিৎসা নির্দেশেখায় । বাংলাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্ত অবস্থান করছে অষ্টম স্থানে ।
প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাংলাদেশে এবং এদের বেশিরভাগ মানুষ ২০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে এবং ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এই রোগ ভুগে।
ডায়াবেটিস কত ধরনের আছ?
মূলত দুই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।এর মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত বংশগত বা জেনিটিক কারণে হয়ে থাকে। কোন বাহ্যিক কোন কারণে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ভিত্তিক সিডিসি ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় অটোইমিউন প্রক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ শরীর নিজেই নিজেকে আক্রমণ করে থাকে।
এবং শরীর নিজে থেকেই ইনসুলিন তৈরি বন্ধ করে দেয়।
প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয়। কিন্তু যে কোন বয়সের মানুষের মধ্যে এই রোগটি ধরা পড়ে থাকে।
কারো পরিবারের মধ্যে যদি ডায়াবেটিস থাকে , তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস হবেই এমন কোন কথা নেই।
যদি কোন মানুষ শারীরিক পরিশ্রম না করে এবং পেট মোটা হয়ে যায় এবং মুটিয়ে পরে, তখন তার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডাক্তার বলেছেন।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসে কেউ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে শুরুতে তার এই লক্ষণ গুলো দেখা যায়।কেউ যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তখন
সুস্থ থাকার জন্য তাকে প্রতিনিয়ত ইনসুলিন গ্ৰহন করতে হবে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপায় খুঁজে পাওয়া যায় নি।
অপরদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো অসচেতন জীবন যাপন।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ টাইপ ২ তে আক্রান্ত হয়। আমেরিকার সিডিসি গবেষণা মতে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ।
সাধারণ অনেক বছর ধরে এই রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে এই রোগ দেখা দেয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত প্রথমে কোন লক্ষণ থাকে না। কিন্তু শরীরের ভিতরে বিভিন্ন জটিলতা শুরু হয়। চিকিৎসারা বলেন।
সচেতন জীবন যাপন আর শারীরিক পরিশ্রম ও স্বাস্থ্যকর খাবার এবং শরীরে ওজন কম রাখার মাধ্যমে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
কি ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে?
রক্ত নালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে যদি রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
আমাদের শরীরে যদি রক্ত ঠিক ভাবে প্রবাহিত হতে না পারে, এবং শরীরের যে জায়গায় রক্ত প্রয়োজন সেখানে পৌছতে না পারে তাহলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি হওয়ার যুকি বেড়ে যায়।
এর ফলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি চলে যেতে পারে, এবং পায়ে ইনফেকশন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলেছেন যে মানুষের কিডনি ,হার্ট অ্যাটাক ,অন্ধত ,স্ট্রোক ,এসব রোগের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস এর সঙ্গে চিনির কি সম্পর্ক?
ডায়াবেটিস হওয়ার সঙ্গে চিনি বেশি খাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি বা চিনি বেশি খাওয়া ডায়াবেটিস হওয়ার ভূমিকা পালন করে।
চিনি বেশি খেলে যেমন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তেমনি মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে আপনার শরীর মুটিয়ে যেতে পারে।
আর যখন শরীর মুটিয়ে যাবে তখন ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে সেটা কাজ করবে। বলেছেন
ডা: একে আজাদ খান।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিউজ টুডে তে বলা হয়েছে,যে চিনি বেশি খাওয়ার ফলে সরাসরি ডায়াবেটিস হয় না।
কিন্তু এটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস এর সঙ্গে শরীরে অন্যান্য সমস্যার যুকি বাড়াতে পারে।তার ফলে ডায়াবেটিস সহজেই আক্রান্তহতে পারে।
সতর্ক হতে হবে যে সব লক্ষণ দেখল:
ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ দেখা না দিলেও শরীরে কিছু বৈশিষ্ট্য উপস্থিতিতে ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝা যেতে পারে।যেমন
- ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা ও পিপাসা বেশি লাগা
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
- অধিক পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ হওয়া
- ঠিকভাবে সময়মতো খাবার না খেলে রক্তে শর্করার কমে যাওয়া
- কাটাছেঁড়া ও ক্ষত হলে শরীরে তা শুকাতে দেরি হওয়া
- ঘোর ঘোর ভাব ও দুর্বল লাগা
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- ছোখে যাপসা দেখা
ডায়াবেটিস ঠেকানো যায় কী করলে?
কারো যদি বংশগত ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। তাহলে বেশি কিছু করার থাকে না। তবে শারীরিক প্রভাবের ক্ষেত্রে কিছু মেনে চললে ডায়াবেটিস রোধ করা যেতে পারে। যেমন–
1. এক ঘন্টা থেকে দের ঘন্টা হাঁটা,
বর্তমান সময়ে জীবন যাপন অচেতন হওয়ার কারণে এবং শারীরিক পরিশ্রম না করার জন্য ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
এ জন্য ডাক্তারা বলেন প্রতি দিন এক ঘন্টা হাঁটার জন্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার জন্য এবং খেলাধুলা করার জন্য।
2.জীবনযাপন পরিবর্তন
যাদের পরিবারের ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস আছে।তাদের আগে থেকেই সচেতন ভাবে জীবন যাপন করা উচিত। যেমন
নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া, নিয়মিত ঘুমানো, এবং নিয়মিত সকাল ঘুম থেকে উঠা, নিয়মিত হাঁটা, মিষ্টি জাতীয় কম খাওয়া, তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, ইত্যাদি।
3. ধুমপান ও মদ্যপান না করা,
ধুমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এ জন্য সবার আগে এই অভ্যাস গুলো ছাড়তে হবে ।
4. অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা,
সাধারণ প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড,কোমল পানীয়, অনেক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আর শরীরের ওজনের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে।যাতে শরীরের কোন ভাবেই অতিরিক্ত ওজন এবং মুটিয়ে না পরে। ডায়াবেটিস কি চিনি বেশি খেলে হয়?
এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব খাবার এরিয়ে চলার জন্য বলে থাকেন।
এছাড়া এক বাড়ে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া বিরতি দিয়ে খাওয়া।
5. রক্তে নজর রাখুন চিনির মাত্রা,
যাদের ঘনিষ্ঠ কারো ডায়াবেটিস ইতিহাস আছে তাদের বছরে একবার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
এবং সেই সঙ্গে এক বার কোলেস্টেরল মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
তখন যদি ডায়াবেটিস হয় সেটা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
তার পরও অনেকেই সব চেষ্টার পর ডায়াবেটিস হয়ে যায়। তাহলে সেই ব্যক্তি যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলে তার সুস্থ্য জীবন যাপন করতে পারবেন।